আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন হাবিব-হারুন |
জুলাই আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ এসেছিল উপরের মহল থেকেই: সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুনের জবানবন্দিতে চাঞ্চল্য
জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেই এসেছিল—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। চলতি বছরের ২৪ মার্চ তিনি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৫ পৃষ্ঠার একটি জবানবন্দি দেন, যা সম্প্রতি আলোচনায় আসে।
সাবেক এই আইজিপি তার জবানবন্দিতে বলেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে প্রতিদিন রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসভবনে নিয়মিত বৈঠক হতো। এসব বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ সচিবরা, র্যাব ও ডিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা, এনটিএমসি, এসবি এবং আনসারের কর্মকর্তারা। সেখান থেকেই আন্দোলন দমন সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা দেওয়া হতো।
🔥 আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি!
চৌধুরী মামুনের জবানবন্দি অনুযায়ী, আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে এবং নজরদারি বাড়াতে হেলিকপ্টার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, "র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের প্রস্তাবেই এই পরিকল্পনা আসে এবং রাজনৈতিক অনুমোদনে হেলিকপ্টার ব্যবহার হয়।"
🩸 লেথাল উইপন ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন প্রবণ এলাকাগুলোতে ‘ব্লক রেইড’ ও ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছিল রাজনৈতিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি তাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা বলেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব ও ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ ছিলেন অতিউৎসাহী।
🧠 আন্দোলনকারীদের মানসিক নির্যাতন
জবানবন্দিতে উল্লেখ রয়েছে, কোর কমিটির এক বৈঠকে ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের মানসিকভাবে ভেঙে ফেলতে চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং সংবাদমাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি দিতে বলা হয়।
🪖 পতনের দিন সেনানিবাসে আশ্রয়
সরকার পতনের দিন নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কীভাবে তিনি সেনানিবাসে গিয়েছিলেন, সে কথাও উল্লেখ করেছেন সাবেক আইজিপি। তিনি বলেন, “৫ আগস্ট বিকেলে একটি হেলিকপ্টার এসে আমাকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমি সেনানিবাসে আশ্রয় নিই।”
🙏 ক্ষমা প্রার্থনা
জবানবন্দির শেষাংশে তিনি গুলি করে হত্যা, আহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নিজেকে সে সময়কার পুলিশ প্রধান হিসেবে অনুতপ্ত বলে উল্লেখ করেন। যদিও জবানবন্দিতে নিজের দায়ের বিষয়টি খুবই সীমিতভাবে তুলে ধরেন এবং প্রধানত মিটিংয়ে অংশগ্রহণের কথা জানান।
আদালতে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘রাজসাক্ষী’ হতে চেয়ে আবেদন করেছেন চৌধুরী মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে তার আবেদন গ্রহণ করেছে।
No comments:
Post a Comment