| ২৬ নেতাকর্মী খুনের পর সেই ওসি স্বেচ্ছা অবসরে |
সীতাকুণ্ডে ওসি ইফতেখার হাসানের নৃশংসতা: দমন-পীড়ন ও হত্যার ছায়া
লিড (Lead):
চট্টগ্রাম: ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার শাসনামলে সীতাকুণ্ড থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখার হাসানের শাসনামলে ব্যাপক দমন-পীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিহতদের পরিবার ও ভুক্তভোগীরা তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করছেন।
পটভূমি (Background):
২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সীতাকুণ্ডে বিএনপি ও জামায়াতের অন্তত ২৬ নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইফতেখার ওসি থাকার সময় আওয়ামীবিরোধী আন্দোলন দমন করতে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করতেন। অনেক হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতায় সংঘটিত হয়।
অভিযোগ ও নির্যাতন (Allegations & Torture):
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, ইফতেখার হাসান ব্যক্তিগতভাবে বা পুলিশের মাধ্যমে বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড় ও নির্যাতন করতেন। নির্যাতনের ধরন ছিল বৈদ্যুতিক শক, উল্টো ঝুলিয়ে পেটানো, বাঁশডলা দ্বারা আঘাত, নখ ও চুল উপড়ে ফেলা এবং দাঁত ভেঙে দেওয়া। স্থানীয় মসজিদের ইমামও তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মাহমুদুল করিম নামের এক ভুক্তভোগী জানান, তাকে চেয়ারে হাত-পা বেঁধে পিটানো হয়েছে, খাটে শুইয়ে বাঁশডলা ও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে এবং তার অর্ধেক দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে।
পদোন্নতি ও দায়িত্ব (Promotion & Position):
অভিযোগ আছে, এসব নৃশংসতার “পুরস্কার” হিসেবে তাকে এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৭ জুলাই তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ৩৫টি লঘুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
মামলা ও বিচার (Cases & Justice):
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ইফতেখারের সময়কালে ৫০০-এরও বেশি গায়েবি মামলা দায়ের হয় এবং প্রায় ২০ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়। নিহত ও আহতদের পরিবার আইনের আওতায় ন্যায়বিচার চান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইফতেখারের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা ও অপহরণ করেছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে একাধিক বিরোধী নেতা, যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়। বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়নি।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য (Victims’ Voices):
সীতাকুণ্ড উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মিছবাহুল আলম রাসেল বলেন, “ওসি ইফতেখার ও তার বাহিনী মিলে আমাদের নেতাকর্মীদের পাখির মতো মেরেছে। আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই।”
পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহের উদ্দিন আশরাফ বলেন, “আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।”
উপজেলা জামায়াতের আমির মিজানুর রহমানও নিশ্চিত করেন, ইফতেখার হাসান ১১ জন জামায়াত নেতা হত্যায় জড়িত ছিলেন।
পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা (Police Statement):
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, “অপরাধ করলে, মামলা হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার হবে।” তবে ওসি ইফতেখারের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উপসংহার (Conclusion):
সীতাকুণ্ডে ইফতেখার হাসানের সময়কালে সংঘটিত নৃশংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও দমন-পীড়ন এখনও এলাকায় ভয় ও ক্ষোভের সৃষ্টি করছে। ভুক্তভোগীরা এখনো তার কঠোর শাস্তি ও ন্যায়বিচারের দাবিতে রয়েছেন।
No comments:
Post a Comment