১১ বছরেই অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক - People’s Bangla

People’s Bangla

Voice of the People | জনতার কণ্ঠস্বর

সর্বশেষ

Home Top Ad

Post Top Ad

Sunday, October 12, 2025

১১ বছরেই অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক

১১ বছরেই অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক

বিআরটিএ কর্মকর্তা সৌরভ সাহার অর্ধশত কোটি টাকার সাম্রাজ্য — হকারের ছেলে থেকে বিলাসবহুল পাজেরো মালিক!

বরিশাল, ১২ অক্টোবর — বিআরটিএর মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ফরিদপুরের সৌরভ কুমার সাহা। তখন হয়তো কেউ ভাবেনি, এই সাধারণ তরুণ একদিন হয়ে উঠবেন অঢেল টাকার মালিক। নোয়াখালী অফিসে যোগ দিয়েই খুলে যায় তার ভাগ্যের দুয়ার। অবৈধ ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে মাত্র ১১ বছরে তিনি গড়ে তুলেছেন অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ, কিনেছেন ১০টি বাস, চারটি প্রাইভেট কার ও অসংখ্য সিএনজি অটোরিকশা।

ফরিদপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা সৌরভের বাবা ছিলেন এক সময়ের পত্রিকার হকার। পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চলত কষ্টে। কিন্তু আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়ায় সাবেক মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুপারিশে ২০১৪ সালে বিআরটিএতে চাকরি পান সৌরভ। এরপর থেকে ঘুষ ও অনিয়মের রাজ্যে শুরু হয় তার দ্রুত উত্থান।

🚗 বিলাসবহুল জীবনে সৌরভ

মাত্র ২৬-২৭ হাজার টাকার সরকারি বেতনের বিপরীতে মাসে আয় করতেন ৩০-৩৫ লাখ টাকা! ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন ঘিরে গড়ে তোলেন বিশাল ঘুষচক্র। দালাল চক্রের মাধ্যমে ফেল করা পরীক্ষার্থীদের থেকে লাইসেন্সপ্রতি ৩-৪ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে “পাস” করাতেন। প্রতিটি ফাইলের আড়াই হাজার টাকা যেত সৌরভের হাতে।

লাইসেন্স পরীক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে তিনি নিজেই সই করাতেন তালিকায়। প্রতিটি বোর্ড থেকেই পেতেন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। সিএনজি রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিতেন ৪০-৫০ হাজার, ট্রাকের জন্য ৫-১০ হাজার, মোটরসাইকেলের জন্য ১-১.৫ হাজার, এমনকি ফিটনেস পরীক্ষায়ও তুলতেন ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

💰 দুর্নীতির জাল

সূত্র জানায়, এভাবে বিগত ১১ বছরে আত্মীয়স্বজনদের নামে-বেনামে গড়ে তোলেন অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদ। কিনেছেন ১০টি বাস, চারটি প্রাইভেট কার, অসংখ্য সিএনজি ও জমি। নিজের নামে কিছুই রাখেননি—সবই বাবা, শ্বশুর, শ্যালক ও দালালদের নামে। ফরিদপুরে ভগ্নিপতির তত্ত্বাবধানে চলছে এসব পরিবহন ব্যবসা।

সৌরভের পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাবও কাজে লাগানো হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মা কৃষ্ণা রানী সাহাকে বানান ফরিদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর। এরপর থেকেই পরিবারের আর্থিক প্রবাহ আরও বেড়ে যায়।

🚓 দুদকের মামলা, তবুও জামিন

অভিযোগ রয়েছে, ২০২৩ সালে বিআরটিএর অনুমোদন ছাড়াই ১৯১টি সিএনজির রেজিস্ট্রেশন করেন সৌরভ। প্রতিটি সিএনজি থেকে নেন ৫০ হাজার টাকা ঘুষ। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তা রাজকুমার সাহা বাদী হয়ে মামলা করলেও, সৌরভ রহস্যজনকভাবে জামিন পেয়ে যান।

🏠 বিলাসবহুল জীবনধারা

বরিশালের নতুনবাজারে আধুনিক ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি—মাসে ভাড়া ২৭ হাজার টাকা। অফিসে যান ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে, যা নিবন্ধিত তার বাবার নামে। এছাড়া বরিশালের নথুল্লাবাদ এলাকায় রয়েছে “হাওলাদার পরিবহন”-এর বাস কাউন্টার। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই পরিবহনের আসল মালিক সৌরভ, যদিও কাগজে-কলমে মালিক তার আত্মীয়রা।

হাওলাদার পরিবহন ছাড়াও আশিক পরিবহন ও ফরিদপুর বাস মালিক সমিতিতে তার আরও বাস রয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, তিনি দুটি পুরোনো বাস বিক্রি করে তিনটি নতুন চেসিস ও ইঞ্জিন কিনেছেন—যেগুলো শিগগিরই রাস্তায় নামবে।

🚨 মাঠপর্যায়ের দুর্নীতি

গত ২৯ সেপ্টেম্বর মাঠ পরীক্ষায় দেখা যায়, ৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র তিনজনকে পাস করানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে সৌরভ নিজেই নিচ্ছিলেন পরীক্ষা ও মূল্যায়ন। পরবর্তীতে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটও জানান, ব্যস্ততার কারণে সময়মতো উপস্থিত হতে পারেননি।

🧾 সৌরভের দাবি

অভিযোগের বিষয়ে সৌরভ বলেন, “আমার বাবার নামে একটি বাস আছে, সেটি ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির অধীনে চলে। আমার বাবার রেন্ট-এ-কার ব্যবসা রয়েছে। আমি কোনো পরিবহনের মালিক নই।” তিনি নিজের বা আত্মীয়দের নামে সম্পদ গড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।

তবে মাঠপর্যায়ে ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরে—যা সৌরভের দুর্নীতির পাহাড়ের এক অংশমাত্র।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

© 2025 Peoples Bangla | All Rights Reserved.
×