দেশে ২৯% স্নাতক বেকার, কর্মবাজারে নিরক্ষর ১.৩ কোটি |
📰 বাংলাদেশের শ্রমবাজারে বৈষম্য ও বেকারত্ব: শিক্ষিত তরুণ থেকে নারী শ্রমশক্তি
বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির মূল শক্তি হওয়ার কথা ছিল বিপুল শ্রমশক্তি। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, কোটি কোটি মানুষ কাজ করলেও তাদের বড় অংশ উৎপাদনশীল নয়, আর শিক্ষিত তরুণরা ডিগ্রি নিয়েও বেকার বসে আছেন। পরিসংখ্যানও এ বিষয়টি স্পষ্ট করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা ৬৯.০৯ মিলিয়ন, যার মধ্যে নিরক্ষর শ্রমিক ১৩.০২ মিলিয়ন। অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ, যারা মূলধারার অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত উৎপাদনদক্ষতা দিতে পারছে না।
শিক্ষিত বেকারত্ব ও যুব সমস্যা
সরকারি হিসেবে বেকারত্ব হার ৩.৬৬ শতাংশ, কিন্তু সংখ্যার হিসাবে ২৬ লাখ ২৪ হাজার মানুষ বেকার। এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারদের হার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি তিনজন স্নাতকের একজন বেকার। ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবদের মধ্যে ২৯ শতাংশ স্নাতক, যা দেশের যুব বেকারত্বের বড় অংশ তৈরি করছে।
এছাড়া, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত শ্রমশক্তির মধ্যে বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য এবং নারীর শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের নিম্ন হার (মাত্র ৩৮.৪০%) দেশের কর্মসংস্থান নীতি পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন দেখাচ্ছে। শহরে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
অনানুষ্ঠানিক খাত ও আয় বৈষম্য
কর্মে নিয়োজিতদের ৮৪ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন। পল্লিতে ৮৭.৫৮%, শহরে ৭৩.৭৬% অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা ৪৮ হলেও মাসিক গড় আয় মাত্র ১৫,৫৫৪ টাকা। পুরুষের আয় ১৬,১০৫ টাকা, নারীর ১২,৬৮১ টাকা। শহরে আয় ১৭,৭০৮ টাকা হলেও গ্রামে ১৪,১৩১ টাকায় সীমিত।
যুবদের ভবিষ্যৎ ও নিট তরুণ
দেশের ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবদের মধ্যে ২০ লাখ বেকার, যা মোট বেকারের ৭৬%। আরও উদ্বেগজনক হলো নিট (NEET) যুবদের সংখ্যা ৮.৫৬ মিলিয়ন, যার মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫.৭৯ মিলিয়ন। অর্থাৎ প্রতি চারজন যুবতীর একজন শিক্ষায়, প্রশিক্ষণে বা কর্মে যুক্ত নয়।
শ্রমবাজারের বৈষম্য ও সমস্যা
- আঞ্চলিক বৈষম্য: ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেকারত্ব বেশি, ময়মনসিংহে কম।
- দক্ষ জনশক্তির অভাব: উত্তরবঙ্গ ও হাওর অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক নেই।
- প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক অর্থনীতি: নতুন প্রযুক্তি ও মহামারি পরবর্তী সময়ে চাকরি হারানো।
- অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিপত্য ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ গড়ার জন্য শ্রমবাজারে বৈষম্য ও বেকারত্ব কমানো অপরিহার্য। শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি, নারী শ্রমশক্তির উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীল শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
No comments:
Post a Comment