| ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগের জবাব দিলেন ঢাবি উপাচার্য |
ঢাবি ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ব্যালট বিতর্ক: উপাচার্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন সব অভিযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ছাপানো সংক্রান্ত বিতর্ক এবং নানা অভিযোগের জবাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল রুমে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান, “পদ্ধতিগত নানা প্রশ্ন তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা চলছে, অথচ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলকভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে।”
নির্বাচনের পর নীলক্ষেতের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট ছাপার নিয়ম ও স্থান নিয়ে অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ব্যালট ছাপানো হয়েছে এবং ভোট কারচুপির আশঙ্কা ছিল বলে দাবী করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল, সাদা দল ও অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীরা স্পষ্ট জবাব দাবি করেন। সাদা দল আশঙ্কা প্রকাশ করে, যদি কোনো কারচুপি প্রমাণিত হয়, তবে পুনঃনির্বাচনের দাবি করা হবে।
উপাচার্য ব্যাখ্যা করেন, নির্বাচনের জন্য ব্যালট ছাপানোর দায়িত্ব একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ও প্রার্থীর কারণে মূল ভেন্ডরের সঙ্গে সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে তাত্ক্ষণিকভাবে টেন্ডারের আওতায় যুক্ত করা হয়। তবে সহযোগী ভেন্ডর নীলক্ষেতে ২২ রিম কাগজে ৮৮ হাজার ব্যালট ছাপার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আগেই জানায়নি। এতে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এই ঘটনায় ভেন্ডরকে শোকজ করা হয়েছে এবং তারা ক্ষমা চেয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে।
উপাচার্য বলেন, নীলক্ষেতে শুধুমাত্র প্রাথমিক ছাপানো ও কাটিংয়ের কাজ হয়েছে। এরপর ব্যালটগুলো সহযোগী ভেন্ডরের মূল কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে প্রি-স্ক্যান, সিলগালাকরণ ও নিরাপত্তা কোড আরোপের জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। মোট ৮৬,২৪৩টি ব্যালট ভোটের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত ব্যালট প্রচলিত পদ্ধতিতে ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন, ব্যালট প্রস্তুতিতে পাঁচ থেকে ছয় ধাপের কঠোর সুরক্ষা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ব্যালট ছাপানো ও কাটিং করা হয়, এরপর প্রি-স্ক্যান, সুরক্ষা কোড আরোপ এবং চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ সীলমোহরের মাধ্যমে ভোটের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোট ২,৩৯,২৪৪টি ব্যালট ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। ৩৯,৮৭৪ জন ভোটারের মধ্যে ২৯,৮২১ জন ভোট দিয়েছেন এবং ১,৭৮,৯২৬টি ব্যালট ব্যবহৃত হয়েছে। অবশিষ্ট ৬০,৩১৮টি ব্যালট বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে।
উপাচার্য আরও জানান, নির্বাচনের দিন দুটি অভিযোগ এসেছে—একটি একুশে হলে অনিয়ম, এবং অন্যটি টিএসসিতে আগে থেকে চিহ্নিত ব্যালটের অভিযোগ। তদন্তে দেখা গেছে, এক ভোটার একাধিকবার বুথে প্রবেশ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পর কিছু মহল খড়কুটো ধরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে, যা দুঃখজনক। তিনি সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রশংসা করেন।
উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরাপদ ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। সব অভিযোগের যথাযথ জবাব ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করার যে কোনো অপচেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করবে।”
No comments:
Post a Comment