জিয়াউল সম্পর্কে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল |
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পোস্টে র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লিখেছেন, র্যাবে কর্মরত অবস্থায় তরুণ সেনা কর্মকর্তারা ভয়ঙ্করভাবে পরিবর্তিত হতেন। সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মী বা সন্দেহভাজনদের অপহরণ ও হত্যা ছিল নিয়মিত ঘটনা। তার মতে, র্যাবে কাজ করার পর তারা যেন “পেশাদার খুনি” রূপে সেনাবাহিনীতে ফিরতেন।
🔹 জিয়াউলকে নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধানের উদ্বেগ
ইকবাল করিম ভূঁইয়া লিখেছেন, তিনি এক পর্যায়ে র্যাবের এডিজি কর্নেল (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) মুজিবকে নির্দেশ দেন যেন তিনি কর্নেল জিয়াউল আহসানকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং নতুন করে আর কোনো ‘ক্রসফায়ার’ না ঘটে। প্রথমদিকে এ ধরনের হত্যার খবর থেমে যায়, কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় সেগুলো চাপা দেওয়া হচ্ছিল।
পরে র্যাব নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার পর কর্নেল জিয়া আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। নিরাপত্তা সংস্থার একাধিক রিপোর্টে তার অবৈধ অস্ত্র মজুদ, সিসিটিভি বসানো ও অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। সাবেক সেনাপ্রধান তাকে এমনকি ঢাকা সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন।
🔹 শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের প্রভাব
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ও সহকারী সামরিক সচিবের ঘনিষ্ঠতার কারণে জিয়াউল আহসান ক্রমেই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। এমনকি সাবেক সেনাপ্রধানের নির্দেশকেও তিনি চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেন।
🔹 জিয়াউলের কর্মজীবন ও অপরাধে সম্পৃক্ততা
- সেনাবাহিনীর ২৪তম লং কোর্স থেকে কমিশন পান (আইডি: বিএ-৪০৬০)।
- ২০০৯ সালে র্যাব-২ এ যোগ দেন।
- র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন।
- ২০১৩ সালে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন।
- শাপলা চত্বরের অভিযানে (২০১৩) ও নারায়ণগঞ্জ ৭ খুনে (২০১৪) তার প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল।
- পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে এনএসআই ও পরে এনটিএমসি-তে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান।
- ২০২১ সালে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে এনটিএমসির মহাপরিচালক হন।
🔹 গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী
- ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত ১,৮৫০টি গুমের ঘটনার বড় অংশেই জিয়াউল আহসানের টিম জড়িত।
- তার টিমের হাতে অন্তত ১,০৩০ জন নিহত হয়েছেন।
- গুম ও হত্যার অন্যতম প্রধান ‘সুপারভাইজার’ ছিলেন শেখ হাসিনা, যিনি নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমে নির্দেশ দিতেন।
🔹 এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম
জিয়াউল আহসান শেখ হাসিনার শাসনামলে ছিল আতঙ্কের প্রতীক। গুম, অপহরণ, ফোন ট্যাপিং, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড – প্রতিটি ভয়ংকর অধ্যায়ের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে। এমনকি সাবেক সেনাপ্রধানও আশঙ্কা করেছিলেন যে, তিনি নিজেই জিয়াউলের টার্গেটে পরিণত হতে পারেন।
No comments:
Post a Comment