গিবত নিয়ে কোরআনে যা আছে |
গিবত: মুসলমানের নেকি ধ্বংসকারী এক ভয়াবহ পাপ
People's Bangla ডেস্ক | ইসলাম ও সমাজ
ইসলামে গিবত বা পরনিন্দা এমন এক ভয়ংকর গুনাহ, যা মানুষের অজান্তেই তার আমলের ভাণ্ডার শূন্য করে দেয়। এটি শুধু একটি সামাজিক ব্যাধি নয়—বরং এক নীরব ধ্বংসযন্ত্র, যা চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ কিংবা ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য।
গিবত কী?
‘গিবত’ শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ—পরনিন্দা, কুৎসা রটনা, পেছনে কারও দোষচর্চা বা সমালোচনা করা। ইসলামে গিবতের প্রকৃত সংজ্ঞা দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি বলেন,
"তোমার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে—এটাই গিবত। যদি ওই দোষ তার মধ্যে সত্যিই থাকে, তবে তা গিবত, আর না থাকলে তা অপবাদ (বুহতান)।”
(সহিহ মুসলিম: ২৫৮৯)
কুরআন কী বলছে?
আল-কুরআনে গিবতের ভয়াবহতা এমনভাবে চিত্রিত করা হয়েছে যে, গিবতকারীকে মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণকারীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
“তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে চাইবে? নিশ্চয়ই তোমরা একে ঘৃণা করো।”
(সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)
এছাড়াও সুরা হুমাজায় আল্লাহতায়ালা বলেন,
“দুর্ভোগ সেই ব্যক্তির জন্য, যে অন্যের নিন্দা করে এবং অপমান করে... যাকে ফেলা হবে হুতামায়, অর্থাৎ আল্লাহর প্রজ্বালিত আগুনে।”
(সুরা হুমাজা, আয়াত: ১–৯)
গিবতের শাস্তির বিবরণ
রাসূল (সা.) বলেন,
“আমি মিরাজে এমন এক দল লোক দেখেছি, যাদের নখ ছিল তামার তৈরি। তারা নিজেদের মুখ ও বুকে আঁচড় কাটছিল। জিবরাঈল (আ.) জানালেন—এরা দুনিয়ায় মানুষের গিবত করত ও মানহানি করত।”
(আবু দাউদ)
আরেক হাদিসে এসেছে,
“যে ব্যক্তি একজন মুসলমানের গিবতের বিনিময়ে এক গ্রাস খাবার খাবে, তাকে জাহান্নামের আগুন খাওয়ানো হবে।”
(আবু দাউদ: ৪৮৮১)
গিবত শোনা ও চুপ থাকা—তাও পাপ
ইমাম নববি (রহ.) বলেন,
“গিবত শুধু করা নয়, তা মনোযোগ দিয়ে শোনাও গুনাহ। কেউ গিবত করলে তাকে বাধা দেওয়া, থামানোর চেষ্টা করা এবং সম্ভব হলে সে স্থান ত্যাগ করাও কর্তব্য।”
(আল-আযকার, পৃষ্ঠা: ২৯৪)
আমাদের করণীয়
- নিজেরা গিবত থেকে বিরত থাকি
- গিবতকারীর সঙ্গ পরিহার করি
- সমাজে গিবতের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াই
- কুরআন ও হাদিসের আলোকে জীবনে তাকওয়া অবলম্বন করি
🔖 শেষ কথা:
গিবত শুধু ব্যক্তি নয়, সমাজ ও জাতির নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। আসুন, নিজেরা গিবত থেকে দূরে থাকি এবং অন্যকেও বিরত রাখি।
No comments:
Post a Comment