মৃ’ত ভেবে ফেলে রাখা হয়েছিল হাসপাতালের মেঝেতে, হঠাৎ আ’র্তনাদ ‘আমাকে বাঁচাও! - People’s Bangla

People’s Bangla

Voice of the People | জনতার কণ্ঠস্বর

সর্বশেষ

Home Top Ad

Post Top Ad

Monday, July 28, 2025

মৃ’ত ভেবে ফেলে রাখা হয়েছিল হাসপাতালের মেঝেতে, হঠাৎ আ’র্তনাদ ‘আমাকে বাঁচাও!

 

মৃ’ত ভেবে ফেলে রাখা হয়েছিল হাসপাতালের মেঝেতে, হঠাৎ আ’র্তনাদ ‘আমাকে বাঁচাও!

📰 আলো হারিয়েও দেশের জন্য আলো জ্বালানোর লড়াই মিঠুর

People’s Bangla ডেস্ক | ২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার

“হঠাৎ দাঁতে প্রচণ্ড আঘাত। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ব্যথা। দাঁত ভেঙে গেছে বুঝতেই অজ্ঞান। যখন চোখ মেলে দেখি, শরীর রক্তে ভেজা, চারপাশে নিথর দেহ। আমাকেও মৃত ভেবে ফেলে রাখা হয়েছে লাশের পাশে। আমি শুধু বলি— আমাকে বাঁচাও, আমি বেঁচে আছি!” — এভাবেই নিজের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন নাটোরের যুবক আব্দুল্লাহ আল বাকি মিঠু

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের কেজি মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তখন আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন কর্মস্থল থেকে। ছররা গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভুল করে মৃত ভেবে লাশের পাশে ফেলে রাখা হয়। পরে জ্ঞান ফিরলে তার আর্তচিৎকারে চিকিৎসা শুরু হয়।

🔹 চোখের দৃষ্টি হারালেও হারাননি সাহস

মিঠু বর্তমানে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার হাটগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। কৃষক আবদুল খালেক ও গৃহিণী জুলেখা খাতুনের একমাত্র সন্তান তিনি। বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে রেডিওলজিতে ডিপ্লোমা শেষে তিনি সিরাজগঞ্জের ড্যাফোডিল স্পেশালাইজড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকার জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে কয়েক দফা অস্ত্রোপচারে চারটি গুলি অপসারণ করা সম্ভব হলেও মুখ ও বাম চোখে রয়ে গেছে ছররা গুলি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাম চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারিয়েছেন মিঠু।

এরপর সরকারের সহায়তায় সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসা করানো হয়, কিন্তু সব গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। এখনো প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন মিঠু। ডান চোখও মাঝে মাঝে ঝাপসা হয়ে যায়, ব্যথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

🔹 আলো হারা চোখ, অদম্য মন

চোখ হারিয়ে থেমে যাননি মিঠু। সংসার ও চিকিৎসার খরচ চালাতে পুনরায় আগের কর্মস্থলে ফিরে যান, এবার শুধুমাত্র একটি চোখ নিয়ে। এক চোখে হারিয়েছেন আলো, কিন্তু হারাননি দেশের প্রতি ভালোবাসা।

তার বাবা আবদুল খালেক বলেন, “হার্টের রোগী আমি, কাজ করতে পারি না। ছেলেটাই সংসার চালায়। ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ধারদেনা করে চিকিৎসা করেছি। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ২ লাখ টাকা পেয়েছি, কিন্তু সেটা কিছুই না। চোখ তো আর ফিরে এলো না।”

মা জুলেখা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার একটাই ছেলে। দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়ে চোখ হারালো। এখনো ও কষ্ট করে বাঁচে, আমাদেরও দেখে। কিন্তু সরকার কি কিছু মনে রাখে?”

মিঠুর কণ্ঠে ছিল কষ্ট চাপা সাহসের স্বর—
“আমি দৃষ্টি হারিয়েছি, কিন্তু দেশকে আলো দিতে পেরেছি — এটাই আমার শান্তি।”

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

×