| আকাশে শক্তি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ: আসছে ৩০টি যু'দ্ধবিমান ও ৬টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার |
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী আধুনিকায়নে বড় পদক্ষেপ: ইউরোফাইটার, জে-১০সি, জেএফ-১৭ ও টি-১২৯ হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে
“বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত” এই মূলমন্ত্রের অধীনে দেশের আকাশসীমা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। শত্রুর বিরুদ্ধে আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি প্রচলিত যুদ্ধে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় শত্রুকে ঘায়েল করা বিমানবাহিনীর মূল কাজ। উন্নত প্রশিক্ষণের কারণে দেশের বিমান বাহিনীর সদস্যরা উড্ডয়ন, পরিচালনা ও অপারেশনে বিশ্বের শীর্ষে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের ঘাটতি রয়েছে। এই শূন্যতা পূরণে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতালি থেকে ইউরোফাইটার টাইফুন, চীন থেকে জে-১০সি, পাকিস্তান থেকে জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান এবং তুরস্ক থেকে টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ক্রয় পরিকল্পনা:
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০২৭ সালের মধ্যে:
- ইতালি থেকে ১০টি ইউরোফাইটার টাইফুন
- তুরস্ক থেকে ৬টি টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার
এর জন্য নীতিগত অনুমোদন এবং দুই দেশের সরকারের সমঝোতার মাধ্যমে চুক্তি চূড়ান্ত হবে। ইতালি ও তুরস্কের প্রতিনিধি সংস্থার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিমানবাহিনী ১২ সদস্যের একটি আন্ত-মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়, প্রতিরক্ষা, অর্থ, পররাষ্ট্র, আইন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং বিমান সদর–এর বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে কমিটিতে প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে বলা হয়েছে।
চীনের জে-১০সি ও পাকিস্তানের জেএফ-১৭:
- জে-১০সি: মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, সিঙ্গল ইঞ্জিন, উচ্চমানের ম্যানুভারিং এবং পশ্চিমা বিমানের তুলনায় ব্যয়সাশ্রয়ী।
- জেএফ-১৭ থান্ডার: পাকিস্তান ও চীনের যৌথ উৎপাদিত হালকা ওজনের যুদ্ধবিমান, এয়ার-টু-এয়ার এবং এয়ার-টু-সারফেস কমব্যাট সক্ষম।
ইতালির ইউরোফাইটার টাইফুন:
- মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট
- সর্বোচ্চ ২,৪৯৫ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগ, ৫৫,০০০ ফুট উচ্চতায় উড্ডয়ন
- রিফুয়েলিং ছাড়া ২,৯০০ কিমি পথ পাড়ি দিতে সক্ষম
- ডবল ইঞ্জিন, ন্যাটো মানসম্পন্ন, স্টেলথ প্রযুক্তি, রাডার ও সেন্সর সুবিধাসম্পন্ন
তুরস্কের টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার:
- দুই ইঞ্জিন ও দুই আসনের হেলিকপ্টার
- দিনে-রাতে, যেকোনো আবহাওয়ায় আক্রমণ ও গোয়েন্দা মিশন পরিচালনা
- ২০ মিমি ঘূর্ণনশীল কামান, এল-ইউএমটিএএস ও সিআইআরআইটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশ-থেকে-আকাশে স্টিঙ্গার ক্ষেপণাস্ত্র বহন
অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ:
বিমানবাহিনীর সাবেক সহকারী প্রধান এয়ার কমোডর (অব.) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “এই উদ্যোগ বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নের সূচনা। আগামিতে আকাশ প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল আমাদের রয়েছে, যা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট ২১২টি বিমান, যার মধ্যে ৪৪টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মূল আক্রমণাত্মক শক্তি হিসেবে এফ-৭ যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া মিগ-২৯বি, ইয়াক-১৩০ লাইট অ্যাটাক, মিল এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, সি-১৩০জে সামরিক পরিবহন বিমান এবং চীনের কে-৮ প্রশিক্ষণ বিমানও বহরে আছে।
উদ্যোগটি দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে, সামরিক আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
No comments:
Post a Comment