| ৩০ বছরের জন্য বিদেশী অপারেটরদের হাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, চু'ক্তি ডিসেম্বরে |
চট্টগ্রাম বন্দরের তিন টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগে ডিসেম্বরে চুক্তি
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি টার্মিনাল — লালদিয়া, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও বে টার্মিনাল — বিদেশি অপারেটরদের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরেই এসব টার্মিনাল পরিচালনায় চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে লালদিয়া টার্মিনাল ৩০ বছর ও এনসিটি এবং বে টার্মিনাল ২৫ বছর মেয়াদে পরিচালনার দায়িত্ব পাবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো।
রোববার রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।
তিনি বলেন, “২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী বন্দরের ট্যারিফ কাঠামো হালনাগাদ করা হয়েছে।”
সেমিনারে ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী ও বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার।
বেসরকারিকরণ ও ট্যারিফ বাড়ানোর পেছনের কারণ
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ কাঠামো তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ট্যারিফ সংস্কার ও বৃদ্ধি অপরিহার্য।
সরকার এখন সেই পরামর্শ বাস্তবায়ন করছে। বে টার্মিনাল থেকে শুরু করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সব নতুন প্রকল্প বেসরকারি খাতে লিজ দেয়ার নীতিতে অটল রয়েছে সরকার। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারকে “আর্থিকভাবে আকর্ষণীয়” করে তোলাই মূল লক্ষ্য।
বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ
এরই মধ্যে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (RSGTI) পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিচালনা শুরু করেছে। শিগগিরই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড এনসিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে, যা বন্দরের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রায় ৪০ শতাংশের সমান।
এদিকে ডেনমার্কের শিপিং জায়ান্ট এ.পি. মোলার মায়েরস্ক লালদিয়া টার্মিনাল কনসেশনে আগ্রহ দেখিয়েছে।
খাতের চ্যালেঞ্জ ও সরকারের পদক্ষেপ
নৌপরিবহন সচিব ইউসুফ বলেন, “শিপিং খাত সিন্ডিকেট, কাঁচামালের উচ্চ মূল্য, অর্থায়নের জটিলতা ও বন্দর সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার মতো চ্যালেঞ্জের মুখে আছে।”
তিনি জানান, নৌপরিবহন অধিদফতর ও বেসরকারি খাতের সাথে যৌথভাবে আইন ও বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে ব্যবসা সহজ হয়।
প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির বিষয়ে সচিব বলেন, “মেরিন প্রশিক্ষণ ও সিডিসি সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা আনা হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকে।”
দেশীয় জাহাজ শিল্পে সমান সুযোগ দাবি
বাংলাদেশ সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি বলেন, “জাহাজ নির্মাণ ও শিপিং খাত ট্যাক্স অব্যাহতি ও প্রণোদনা পেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় উৎসে পরিণত হতে পারে।”
সংক্ষেপে:
🔹 ডিসেম্বরেই বিদেশি কোম্পানির সাথে তিন টার্মিনালের চুক্তি
🔹 ট্যারিফ কাঠামো আইএফসি’র প্রস্তাব অনুযায়ী
🔹 ডিপি ওয়ার্ল্ড, মায়েরস্কসহ বড় কোম্পানির আগ্রহ
🔹 শিপিং খাতে আইন সংস্কার ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির উদ্যোগ
No comments:
Post a Comment