| আজ জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো |
আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য
ঢাকা, মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর):
জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য আজ মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে বাস্তবায়নের পদ্ধতি সনদের অংশ না হওয়ায় তা এ ভাষ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই বিষয়ে কমিশন আলাদাভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন,
“মঙ্গলবার দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের অনুলিপি পাঠানো হবে। সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে আগামী ১৭ অক্টোবর।”
কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানান, জুলাই সনদে তিনটি অংশ থাকবে—
১️⃣ সংস্কার উদ্যোগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ ভূমিকা,
২️⃣ ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব,
৩️⃣ এবং একটি অঙ্গীকারনামা।
তিনি আরও বলেন, সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে দুজন করে প্রতিনিধির নাম চাওয়া হয়েছিল, এবং সবাই ইতিমধ্যে তাদের প্রতিনিধিদের নাম জমা দিয়েছে। অঙ্গীকারনামার ৩০টি কপি দলগুলোর প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
সাংস্কৃতিক আয়োজনসহ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় তিন হাজার অতিথি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হবেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে মাগরিবের আগেই স্বাক্ষর সম্পন্ন হবে, এরপর নামাজের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বে প্রজেকশন ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে সনদ তৈরির পটভূমি ভিডিওচিত্রে তুলে ধরা হবে। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন,
“প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংস্কৃতিক অংশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সনদের ভাষ্য ও বিতর্কিত ধারা
কমিশন সূত্র অনুযায়ী, গত ১১ সেপ্টেম্বর জুলাই সনদের একটি খসড়া ভাষ্য দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছিল। পরে কেবল ভাষাগত ও বাক্যগত সংশোধন করা হয়েছে। ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সংযোজনের প্রস্তাব থাকলেও বিতর্ক এড়াতে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শন’ সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(ক) বিলুপ্তির বিষয়ে কমিশন দলগুলোর মতামত নিয়েছিল। প্রায় সব দলই এর পক্ষে মত দিলেও বিষয়টি চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
কমিশনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী,
“অধিকাংশ দল বিধানটি বিলুপ্তির পক্ষে মত দিয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ সংসদ ক্ষমতায় এসে বিষয়টি নিজ উদ্যোগে সংশোধন করতে পারবে। নতুন করে সনদে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই।”
পটভূমি
ঐকমত্য কমিশনের দুই দফা সংলাপের ভিত্তিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে দলগুলো একমত হয়। এসব প্রস্তাব নিয়েই জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তবে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় জুলাই মাসে নির্ধারিত সনদ স্বাক্ষর বিলম্বিত হয়। পরবর্তীতে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়নের বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে উঠলেও গণভোটের ভিত্তি, সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে।
ফলে দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মিলিয়ে একটি সমন্বিত বাস্তবায়ন পদ্ধতির প্রস্তাব সরকারকে দেবে কমিশন।
No comments:
Post a Comment