| বড় নির্বাচনি ঐক্যের পথে বিএনপি |
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক মেরূকরণ তীব্র হচ্ছে, বড় জোটের পথে বিএনপি ও সমমনাদের তৎপরতা
স্টাফ রিপোর্টার | পিপলস বাংলা নিউজ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেরূকরণ ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নির্বাচনি ঐক্য ও আসন সমঝোতা নিয়ে চলছে জোরালো আলোচনা ও দর কষাকষি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জামায়াতের ছয় দলীয় আন্দোলন
বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ছয়টি দলকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। তাদের মূল দাবি—জুলাই জাতীয় সনদের আইনিভিত্তি তৈরি ও সেই অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান।
তবে আন্দোলনে থাকা দলগুলো একে ‘নির্বাচনি জোট’ হিসেবে দেখছে না।
বৃহৎ জোট গঠনে বিএনপির তৎপরতা
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনের আগে বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠনের পথে এগোচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়ে নিয়েছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন,
“বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠন প্রক্রিয়া চলছে। আমরা কার সঙ্গে কথা বলছি, তা যথাসময়ে জানানো হবে।”
নীতিনির্ধারকদের মতে, বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক, ইসলামি ও আলেম নেতৃত্বাধীন দলগুলোকে একত্রিত করে একটি বৃহৎ জোট গঠন করতে চায়।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সাড়া
যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে—গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), লেবার পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ।
১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন,
“বিএনপির আহ্বানে আমরা ইতোমধ্যে ৩০-৩৫টি আসনের তালিকা দিয়েছি।”
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী জানান,
“বিএনপির নেতৃত্বে যে নির্বাচনি জোট হচ্ছে, তাতে আমরা আছি এবং প্রার্থী তালিকাও জমা দিয়েছি।”
এছাড়া **এলডিপি, বাম ঐক্য, লেবার পার্টি, জাতীয় পার্টি (আন্দালিব রহমান পার্থ)**সহ দলগুলোও বিএনপির সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের দ্বিধা, আসন সমঝোতায় আগ্রহ
বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের আনুষ্ঠানিক আলোচনাও চলছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন,
“আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। এখন আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করছি।”
মাহমুদুর রহমান মান্না যোগ করেন,
“আমরা তালিকা প্রস্তুত করছি, তবে কেবল আসন নয়—রাজনৈতিক অবস্থানও বিবেচনায় রাখব।”
গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির অবস্থান
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন,
“বিএনপির সঙ্গে আমরা ২০২২ সাল থেকেই আছি। ইতোমধ্যে ৫০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছি। তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেব।”
অন্যদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, তাদের দল স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে অন্যদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে।
এনসিপির দিকে বিএনপির নজর
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারায় গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কেও বিএনপি তার জোটে যুক্ত করতে চায়।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন,
“গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংস্কারভিত্তিক আলোচনায় রয়েছি। এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক জোট সিদ্ধান্ত হয়নি।”
সূত্র জানায়, এনসিপির একাংশ বিএনপির সঙ্গে জোটে যেতে চায়, অন্য অংশ জামায়াতের সঙ্গে বা নতুন জোটের পক্ষে।
ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগে বিএনপি
বিএনপি ইতোমধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
সূত্র বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব এবং লালবাগে মাওলানা মামুনুল হককে আসন দেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনায় রয়েছে।
তবে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন,
“২৫ অক্টোবর সাধারণ পরিষদ ও শূরার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আমরা কোন জোটে থাকব।”
আলেম সমাজকেও পাশে চায় বিএনপি
বিএনপি হাটহাজারী মাদরাসা, ছারছীনা দরবারসহ দেশের বিভিন্ন আলেম ও মুরুব্বিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
দলটির মতে, জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে ধর্মীয়, উদার ও গণতান্ত্রিক সব পক্ষকে একত্রিত করা সময়ের দাবি।
সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই বিরোধী দলগুলোর ঐক্যের চিত্র পরিষ্কার হচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন নতুন জোটে মধ্যপন্থী, বাম, ইসলামি ও নাগরিক আন্দোলনের শক্তিগুলোর অংশগ্রহণের সম্ভাবনাই এখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
No comments:
Post a Comment