| ধর্ষণে জড়ালেও শাস্তি হবে না মনে করে ২৭.৫৮% আসামি |
পিবিআইর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে ধর্ষণ মামলার বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবুও ২৭.৫৮ শতাংশ অভিযুক্ত মনে করেন, এ ধরনের অপরাধে তাদের শাস্তি হবে না। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ৮৪টি আলোচিত ধর্ষণ মামলা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পেয়েছে।
পিবিআইর বিশ্লেষণ আরও বিস্তৃত: তারা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১১,৬২৮টি ধর্ষণ মামলা পর্যবেক্ষণ করেছে। এই মামলাগুলো বিভিন্ন থানা ও আদালতে দায়ের হয়েছিল। ২৫২টি মামলা এখনও তদন্তাধীন।
ভুক্তভোগী, বাদী ও আসামিদের সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে:
- অভিযুক্তদের ২০.২৩ শতাংশ মাদকাসক্ত, ২৭.৩৮ শতাংশ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।
- প্রেম বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৩৩.৩৩ শতাংশ ধর্ষণের মতো অপরাধ করেছে।
- ভুক্তভোগীর মধ্যে ছাত্রী ও শিশু ৭২.৬১ শতাংশ।
- অধিকাংশ ঘটনায় অভিযুক্ত ভুক্তভোগীর আত্মীয় বা পরিচিত।
- ভুক্তভোগীরা সাধারণত অতিদরিদ্র।
২০১৮ সালের ১০৪টি বিচারিক আদালতের রায় বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ১২টি মামলায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন সাজা হয়েছে। সাজার হার ১১.৫৪ শতাংশ, ৯২টি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন (৮৮.৪৬ শতাংশ)।
আসামিদের মধ্যে মাত্র ১৫ জন জানতেন মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি, ৩৭ জন জানত না, বাকি ৩৫ জনের উত্তর পাওয়া যায়নি। ২৪ জন মনে করতেন শাস্তি হবে না, ২৬ জন মনে করতেন শাস্তি হবে।
পিবিআইর প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোস্তফা কামাল বলেন,
“সমাজ থেকে ধর্ষণ কমাতে সবার ভূমিকা জরুরি। শুধু শাস্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। মূল্যবোধ ও নৈতিকতা জাগ্রত করতে হবে।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন,
“ধর্ষণকারীদের অনেকের প্রভাব ও প্রটেকশন রয়েছে। ভুক্তভোগীরা আতঙ্কিত ও অসহায়। বিচার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অভিযুক্তরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।”
ভুক্তভোগীর মানসিক অবস্থা ঘটনাপরবর্তী সময়ে নাজুক হয়ে ওঠে। অনেক সময় তারা সঠিকভাবে ঘটনার বর্ণনা দিতে পারেন না। সামাজিক রীতিনীতি ও পারিপার্শ্বিক কারণে অনেক ভুক্তভোগী সাক্ষ্য দিতে চান না। এর সুযোগ নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সুবিধা পান।
পিবিআই ১৬টি সুপারিশ করেছে, যা মামলা তদন্তের গুণগত মান উন্নয়নে সহায়ক:
- ধর্ষণ-সংক্রান্ত খবর পেলে অবিলম্বে ক্রাইমসিন দলকে জানানো।
- প্রশিক্ষিত নারী তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পাঠানো।
- পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ভিডিও ধারণ করবেন।
- ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অপরাধীর আলামত যথাযথভাবে সংগ্রহ।
- অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী উভয়ের ডিএনএ পরীক্ষা নিশ্চিত করা।
- জব্দ তালিকা নিখুঁতভাবে সংরক্ষণ ও উপস্থাপন।
- পাবলিক ও পুলিশ সাক্ষীদের তথ্য চার্জশিটে সংযুক্ত করা।
- তদন্তকালীন ত্রুটি সংশোধন।
- মামলার দ্রুত ট্রায়াল ফাইলে প্রেরণ।
- পলাতক আসামি হাজিরের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা।
- সাক্ষীদের যথাযথভাবে হাজির করা।
- জবানবন্দি গ্রহণকারী সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য নিশ্চিত করা।
- সরকারি কৌঁসুলির দায়িত্বে সচেতনতা বৃদ্ধি।
- পাবলিক সাক্ষীদের যাতায়াত ও খাবারের ব্যয় সরকারিভাবে দেওয়া।
- বিচারকালীন সময়কাল কমানোর উদ্যোগ।
- অভিযোগ প্রমাণের জন্য সঠিকভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ।
২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পিবিআই ১০৪৭টি ধর্ষণ মামলা তদন্ত করেছে। এতে ২,২১৯ জন আসামির মধ্যে ১,০৬১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে। ৪১২টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, ৬০টি মামলা এখনও তদন্তাধীন।
No comments:
Post a Comment