ডাকসু ভোটের যোগফলে গরমিল, পরে সংশোধন |
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে ভোটের হিসাব গরমিল, স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফলে ভোটের সংখ্যায় গরমিল ধরা পড়েছে। নির্বাচনের দুই দিন পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) হলভিত্তিক ভোটের তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায়, ঘোষিত ফলাফলের সঙ্গে প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের যোগফল মিলছে না।
এ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এটিকে ‘দীর্ঘ সময় একটানা কাজের কারণে মানবীয় ভুল’ বলে ব্যাখ্যা করেছে।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ভোটের সংখ্যায় কিছু বিভ্রাট ঘটলেও নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
যেসব প্রার্থীর ভোটে গরমিল ছিল
- ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহর প্রকৃত ভোট ছিল ৯,১০১, কিন্তু ঘোষণায় দেখানো হয়েছিল ৯,০৬১।
- ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের ভোট ছিল ৯,৮৪৪, তবে ফলাফলে ছিল ৯,৩৪৪।
- ক্রীড়া সম্পাদক পদে চিম চিম্যা চাকমার ভোট ৩,৮৮৮ হলেও ফলাফলে ছিল ৩,৭৮৮।
- কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমার ভোট ৯,৫৪৮, অথচ ঘোষণায় দেখানো হয় ৮,৯৮৮।
অন্যদিকে কিছু প্রার্থীর ভোট বেশি দেখানো হয়েছে। যেমন,
- ভিপি প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ প্রকৃত ভোট ৬, কিন্তু ফলাফলে দেখানো হয়েছিল ৮।
- এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন পেয়েছিলেন ৮৯০, তবে দেখানো হয়েছিল ৯০০।
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ফাতিন ইশরাকের ভোট ছিল ২,০১১, ফলাফলে দেখানো হয় ২,০২১।
প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া
অসঙ্গতি প্রকাশ্যে আসার পর প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ সাকিব লিখেছেন, “হলভিত্তিক ভোটের হিসাবে আমার মোট ভোট ৩,৯৬২ হলেও সম্মিলিত ফলে দেখানো হয়েছে ৩,৯২২।”
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ী সর্বমিত্র চাকমা ফেসবুকে লিখেছেন, “ডাকসুর মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ভোট গণনায় ভুল কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটি পুরো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো যথেষ্ট।”
এদিকে জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে ফলাফলের অসঙ্গতি, প্রক্সি ভোট, আগে থেকে ভরাট ব্যালট ও অস্বাভাবিক ভোটার উপস্থিতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। তিনি ভোটের পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবি জানান।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল ঘোষণার প্রতিটি ধাপ ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নির্বাচনের চিত্র
এবারের নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪৪ জন প্রার্থী, এর মধ্যে ৩৭ জনই ১০০ ভোটের কম পেয়েছেন। এমনকি ৩ জন প্রার্থী মাত্র ১ ভোট পেয়েছেন।
জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২৩ জন প্রার্থী, তাদের মধ্যে ১০ জন ১০০ ভোটের কম পেয়েছেন। সর্বনিম্ন ভোট পেয়েছেন নিয়াজ মাখদুম (৬) ও সাইয়াদুল বাশার (৯)।
No comments:
Post a Comment