| পুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যু, ইনচার্জ গ্রেপ্তার |
নবীনগরে চুরির অভিযোগে পুলিশ ফাঁড়িতে আটক যুবকের মৃত্যু, ইনচার্জ গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর এলাকায় চুরির অভিযোগে চার দিন পুলিশ ফাঁড়িতে আটক থাকার পর আবদুল্লাহ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, চোর সন্দেহে প্রথমে গ্রামবাসী এবং পরে পুলিশি নির্যাতনের কারণে যুবকটি প্রাণ হারিয়েছেন।
সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম সোমবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবদুল্লাহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে। গত রোববার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ সেপ্টেম্বর সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামে একটি বাড়িতে টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে। এর সূত্র ধরে ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে সলিমগঞ্জ বাজারের সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে আবদুল্লাহকে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় আটক করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় কয়েকজন তাকে মারধর করে বাড়িতে নিয়ে যান এবং সেখানে নির্যাতন চালান। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়।
পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁড়িতে আবদুল্লাহর ওপর নির্যাতন চলতে থাকে। তার হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়, কপালের চামড়া ছিলে ফেলা হয়। তাকে চার দিন ফাঁড়িতে আটক রাখা হয় এবং বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় বাবু ওরফে রাব্বি ও মাসুদ রানা নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা কারাগারে পাঠানো হলেও আবদুল্লাহকে ফাঁড়িতেই রাখা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে সলিমগঞ্জ অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
যুবকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়রা সলিমগঞ্জ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে প্রশাসন ফাঁড়ি বন্ধ করে সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে।
আবদুল্লাহর ছোট ভাই সাকিল মিয়া নবীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মহিউদ্দিন, মোহাম্মদ তবি মিয়া, আলামিন, আয়নাল হকসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আবদুল্লাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন।
নবীনগর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন,
"সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমাকে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে যুবককে ফাঁড়িতে আটকে রাখে। নিহত যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। ইনচার্জকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।"
No comments:
Post a Comment