| জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্তদের ৯৫ ভাগ থাকে গ্রামে |
জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সংকট: রংপুরের তাশরিফার গল্প
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামের তিন বছরের মেয়ে তাশরিফা জন্মের মাত্র পাঁচ মাসে হার্টে ছিদ্র থাকা নিশ্চিত হওয়ায় চিকিৎসার জন্য ভুগছেন। রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রশাসনিক ও অব্যবস্থাপনার কারণে সমস্যার মুখে পড়েন। অন্যদিকে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ্য নেই। ফলে তাশরিফা এখনও চিকিৎসাহীন অবস্থায় রয়েছেন।
শিশু-হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ৯০ ভাগ শিশু চিকিৎসার বাইরে রয়েছে। প্রধান কারণ, রোগীদের ৯৫ ভাগই গ্রামে অবস্থান করছেন, অথচ চিকিৎসার সুবিধা প্রায় সম্পূর্ণ শহরে, এবং তারও বেশি ঢাকায় কেন্দ্রীভূত।
শিশুর হৃদরোগ: চরম বাস্তবতা
বাংলাদেশ জার্নাল অব কার্ডিওভাস্কুলার অ্যান্ড থোরাটিক অ্যানেসথেসিওলজিস্টের তথ্যমতে, দেশে বছরে ৭৩ হাজার শিশু জন্মের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে এক-তৃতীয়াংশ শিশু এক বছরের মধ্যে মারা যায়।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা বলেন,
"বাংলাদেশে জন্মগত হৃদরোগের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি ডেঙ্গু বা কোভিডের মতো একটি মহামারি, তবে জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে এখনও অন্তর্ভুক্ত নয়।"
কার্ডিয়াক সেন্টারের অভাব
দেশে জন্মগত হৃদরোগীদের ৯৫ ভাগ গ্রামে বসবাস করেন, কিন্তু চিকিৎসার সুযোগ প্রধানত শহরে। ঢাকা ছাড়া রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে কমপক্ষে একটি করে কার্ডিয়াক সেন্টার থাকলেও বরিশাল ও ময়মনসিংহে কোনো সেন্টার নেই।
ডা. এম এ কে আজাদ, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের শিশু ও জন্মগত হৃদরোগ সার্জন বলেন,
"চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থায় বিশেষ স্বাস্থ্যবীমা জরুরি। শিশুর জটিল হৃদরোগের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক কাঠামো পর্যাপ্ত নয়। রোগীর প্রকৃত চিত্র অজানা, তাই সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন।"
প্রতিরোধ ও সচেতনতা
শিশু হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো না হলে শিশু হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।
অধ্যাপক ডা. এসআর খান বলেন,
"শিশুদের হৃদরোগে প্রধান ঝুঁকি— ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহ, চিকিৎসা না হওয়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থায় কেমোথেরাপি বা ভাইরাল রোগ। তবে এসবের প্রতিকার সম্ভব।"
বিশ্ব হৃদরোগ দিবসের বার্তা
আজকের বিশ্ব হৃদরোগ দিবসের প্রতিপাদ্য— ‘ডোন্ট মিস এ বিট’, অর্থাৎ প্রতিটি হৃৎস্পন্দনই জীবন। প্রতিটি শিশুর হৃদরোগ সঠিক সময়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
No comments:
Post a Comment