জিয়ার আদর্শ ভুলে মুখে আওয়ামী বয়ান; জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বিএনপি |
বিএনপির আদর্শচ্যুতি নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার মূল প্রেরণা এসেছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। তাঁর প্রবর্তিত জাতীয়তাবাদী দর্শন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি, গ্রামীণ উন্নয়ন ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই দলটির জন্ম।
জিয়ার রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে একদলীয় শাসন ও রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন, যাতে ভিন্ন মত ও শ্রেণির মানুষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারীদেরও জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে সম্পৃক্ত করেন তিনি। কৃষক, শ্রমিক, নারী, তরুণ, প্রবাসী এবং সংখ্যালঘুদের রাজনীতির মূলধারায় যুক্ত করার চেষ্টা ছিল তাঁর জাতীয়তাবাদের অন্যতম ভিত্তি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ধীরে ধীরে তার মূল আদর্শ থেকে সরে আসছে। দলের বক্তব্যে এখন প্রায়শই শোনা যায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার। এমনকি আওয়ামী লীগের মতোই ৭১-এর গল্প, শহীদদের রক্তের ত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রাজনৈতিক ভাষণে জায়গা পাচ্ছে, যা তাদের মৌলিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
একসময় বিএনপি নিজেকে ভিন্ন ধারার জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিল, যেখানে মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে দেখানো হতো। অথচ বর্তমানে তারা প্রায়শই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সমান্তরালে দাঁড় করাচ্ছে—যা জনগণের বড় অংশ ভালোভাবে নিচ্ছে না।
রাজনৈতিক কৌশলগত ভুল, নেতৃত্বের সংকট, আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতার অভাব এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড—এসবই বিএনপির আদর্শচ্যুতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
No comments:
Post a Comment