| ‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং হল কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে একটি নিয়মিত দৃশ্য ছিল। ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা হলগুলোতে এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা শিক্ষার্থীদের মুখে ফুটে ওঠে।
তেমনই এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন সূর্যসেন হলে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান। তিনি জানান, ২০২৪ সালের শুরুতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অনিয়মিত হওয়ায় তাকে আলাদা রুমে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাঁর বাম হাত মোচড় দেওয়া হয়, এবং কান-গাল বরাবর থাপ্পর দেওয়া হয়, যার ফলে রক্ত ঝরেছে। আরিফুর জানান, “প্রতিদিন গেস্টরুম করা লাগত; ফাইনাল পরীক্ষার সময়েও পড়ার অনুমতি পেতাম না, না হলে খোঁজাখুঁজি শুরু হতো।”
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গেস্টরুম সংস্কৃতি এখন আর নেই। তবে আরিফুর আশঙ্কা, হলে রাজনীতি ফিরে এলে পুনরায় ‘গণরুম-গেস্টরুম কালচার’ ফিরে আসতে পারে।
শুধু আরিফুর নয়, অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীরও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব। সম্প্রতি ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কমিটি ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিক্ষোভ দেখায়, এবং কিছু ক্ষেত্রে হলে ভাঙচুরও ঘটে। এর পর প্রশাসন মৌখিকভাবে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়।
এখনও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন হলগুলোতে রাজনীতি শুরু করার পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ও কিছু বামপন্থি সংগঠন হলে রাজনীতি না চাওয়ার পক্ষে। তাদের বক্তব্য, “হলে রাজনীতি থাকলে শিক্ষার্থীরাই এর ভিক্টিম হবে।”
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন বলেন, “হলগুলোতে যদি আমাদের প্রকাশ্য সাংগঠনিক কাঠামো না থাকে, তাহলে আমরা ডাকসু নির্বাচনে কাজ করতে পারব না। তাই হল কমিটি ঘোষণা করেছি।”
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, “হলগুলোর সংকট মোকাবিলায় হল কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। শিক্ষার্থীদের অনুভূতিকে সম্মান জানানো উচিত।”
অন্যদিকে, গোপন রাজনীতি বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে, এমনই দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এখনও শিবির মধ্যম পথেই অবস্থান নিয়েছে। তারা দাবি করছে, “নেতাদের পরিচয় প্রকাশ্য না হলেও শিক্ষার্থীরা সবাইকে চেনে। হল থেকে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রোগ্রামে আসে, তাই গোপন কার্যক্রম সীমিত।”
তবে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, হলে প্রকাশ্য রাজনীতি থাকলে পুনরায় প্রভাব পড়বে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক ও উদ্বেগ।
No comments:
Post a Comment