পুলিশে চাকরি করেই ১০তলা ভবন, ডুপ্লেক্স বাড়ি |
ঘুষে গড়া সম্পদের সাম্রাজ্য, আলোচনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে ১৯৯১ সালে যোগ দিয়েছিলেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নের কৃষক পরিবারের সন্তান নাছির উদ্দিন মল্লিক। দীর্ঘ ৩৪ বছরের চাকরিজীবনে তিনি উপ-কমিশনার পর্যন্ত পদোন্নতি পান। তবে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
বহুতল ভবন থেকে আলিশান বাংলো
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার এলাকায় ৭ শতক জমি কিনে নাছির ২০১৯ সালে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি নেন। অনুমতি ছিল সাততলা ভবনের জন্য, কিন্তু তিনি নির্মাণ করেন ১০ তলা ভবন। পুলিশের সদর দপ্তরে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভবন নির্মাণের অর্থ এসেছে চাকরির বেতন ও স্ত্রীর ব্যবসা থেকে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তার স্ত্রী কোনো দিন চাকরি বা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
এছাড়া বরিশালের দক্ষিণ সাগরদীতে ‘নাহিরীন ভ্যালি’ নামে নির্মাণ করেছেন এক আলিশান বাংলো। দামি আসবাব, পাখির জন্য আলাদা ঘর, পাথরের নকশা—সব মিলিয়ে চোখ ধাঁধানো সেই স্থাপনা। গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জেও তৈরি করেছেন দোতলা ভবন, যদিও সেখানে কেউ থাকে না। পাশাপাশি ঝালকাঠি ও নিজ এলাকায়ও বিপুল জমি-সম্পত্তি ক্রয় করেছেন তিনি।
ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ
ভোলায় দায়িত্ব পালনকালে নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট বদলানোর অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। স্থানীয় কয়েকজনের দাবি, শুধু ভোলাতেই ২০২১ সালে তিনি প্রায় ৯৯ মামলার তদন্তে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
এক ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন, “আমি বিএনপির কর্মী। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন নাছির। তিনি আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। জমি বিক্রি করে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিলেও তিনি মিথ্যা রিপোর্ট দেন।”
আরেক ব্যবসায়ী মশিউর রহমান অভিযোগ করেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে হয়রানি করা হয়েছিল, যদিও পরে প্রমাণ হাজির করে তিনি রক্ষা পান।
নাছির উদ্দিনের বক্তব্য
অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি বৈধ টাকা দিয়েই ভবন নির্মাণ করেছেন এবং জনপ্রিয় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অগ্রিম অর্থ পেয়েছিলেন। ঢাকায় প্লট বা ফ্ল্যাট থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন।
তদন্তের দাবি
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
No comments:
Post a Comment